নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২২ জুন ২০১৮
দেশে মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালীন সময়েও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান আনছে চিহ্নিত চোরাচালানিরা। বুধবার সন্ধ্যায়ও প্রাইভেট কার তল্লাশি করে শহরতলীর লিংকরোড উত্তর মহুরীপাড়া প্রধান সড়কে র্যাব এবং টেকনাফের বরইতলীতে কোস্টগার্ড সদস্যরা বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও স্বর্ণেরবারসহ ছয় নারীপুরুষকে আটক করেছে। সূত্র জানায়, ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য দেশে প্রবেশের প্রধান রুট হচ্ছে টেকনাফের একাধিক পয়েন্ট। হয়ত সমুদ্র পথে নতুবা নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফের বিভিন্ন স্থান দিয়ে ইয়াবার চালান দেশে ঢোকানো হয়ে থাকে। কিছু কিছু চালান উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্ট দিয়েও এনে থাকে চোরাচালানিরা। গোয়েন্দা সংস্থার তৈরীকরা সর্বশেষ তালিকায় কক্সবাজারে ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা সম্রাটের মধ্যে ৯১২জনই হচ্ছে টেকনাফের। মাসাধিককাল আগে যখন মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হয়, তখনও ইয়াবা কারবারিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ছিল। পরবর্তীতে তারা নিজেকে রক্ষার জন্য আত্মগোপনে চলে যায়। তবে গডফাদাররা এলাকায় না ফিরলেও প্রশাসনের সন্দেহ দূর করতে ও ঈদ উদযাপনের বাহনায় কেউ কেউ বাড়িঘরে ফিরে এসেছে।
ইয়াবা কারবার চালু রাখতে তারা পাহাড়, সমুদ্র উপকূলে এবং প্রজেক্টের বেড়িবাঁধে রাত কাটাচ্ছে। বন্দুকযুদ্ধে নিহত আকতার কামালের সহোদর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত গডফাদার সাহেদ কামাল, শীলখালীর শামশুদ্দিন ওরফে বাঘ শামসু, উখিয়ার মাহমুদুল হক, শহরের শাহজাহান আনছারী, মহেশখালীর শরীফ বাদশা ও সালাহ উদ্দিনের সিন্ডিকেট এখনও অধরা থাকায় মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান আনা বন্ধ হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্রের দাবী মতে, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকার বাইরে কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফে অন্তত সহস্রাধিক ইয়াবা কারবারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার সঙ্গে ওইসব ইয়াবা কারবারির গোপন আঁতাত থাকায় এ পর্যন্ত প্রশাসনের কোন আছড়ই লাগেনি তাদের শরীরে। যার কারনে তালিকার বাইরে থাকা সীমান্তের কোটিপতি খ্যাত ওই ইয়াবা সম্রাটগণ আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ধর-পাকড়ের আওতায় আসেনি। সচেতন মহল বলেন, সরকার দেশে যে মাদক বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে, তা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। কেননা হাতেগোনা কয়েক’শ মাদক ব্যবসায়ী ধবংস হলেও দেশের ১৬ কোটির বেশী মানুষকে রক্ষা করতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের কাছে সরকারের মাদক বিরোধী এ অভিযান প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ পৌর কাউন্সিলর একরামূল হক নিহত হওয়ার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান ঝিমিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানায়, একরাম নিহত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ায় মাদক বিরোধী অভিযান দৃশ্যমান হয়নি। যার কারণে ইয়াবা সিন্ডিকেট ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গডফাদাররা আত্মগোপনে থাকলেও তাদের সিন্ডিকেট সদস্যরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। সিম বদল করে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছে গডফাদারদের সঙ্গে। ঠিকই ইয়াবার চালান আনছে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজার ক্যাম্পের র্যাব সদস্যরা বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে ২১হাজার ৪’শ পিস ইয়াবাসহ পাঁচ নারীপুরুষকে আটক ও একটি প্রাইভেট কার জব্দ করেছে। আটকরা হচ্ছে-যশোরের অভয়নগরের মো: মাসুম সর্দার, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার মো: বাছিদ রানা, তার স্ত্রী সুলতানা আক্তার রজনী, ঢাকা তুরাগের উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের মো: আজিজুল হাকিম ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পশ্চিম কালিখাপুরের মো: সাহাব উদ্দিন। এছাড়া কোস্টগার্ড বাহিনীর পূর্বজোনের অধীনস্থ সিজি স্টেশানের সদস্যরা টেকনাফ বরইতলী এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে চারটি স্বর্ণেরবার সহ মো: আব্দুল্লাহ নামে এক চোরাচালানিকে আটক করেছে। জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত টেকনাফের বাহারছড়ার ইয়াবা গডফাদাররা আত্মগোপনে গেলেও তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা রয়েছে প্রকাশ্যে। সমুদ্র ও পাহাড় ঘেষা ওই এলাকায় তেমন কোন অভিযান চালানো হয়নি এ পর্যন্ত। এতে প্রকাশ্যে রয়েছে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ইয়াবার বড় চালান পাঁচার হয় সমুদ্রপথে। নৌপথ নিয়ন্ত্রণের মূল গডফাদাররা হচ্ছে- মহেশখালী, বাঁশখালী ও টেকনাফের বাহারছড়ার বাসিন্দা। তারা হচ্ছে- টেকনাফ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলবি রফিক উদ্দিন, তার সহোদর বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলবি আজিজ উদ্দিন ও শামশুদ্দিন আহমদ প্রকাশ বাঘ শমশু। শামশুদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা ও মানবপাচারসহ একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্য মো: কায়সার লালু শহরের এসএ পরিবহন থেকে ইয়াবা সহ এবং আবুল বশর ৫০ হাজার ইয়াবা সহকারে ঢাকায় আটক হয়ে জেলে গেলেও শামশুদ্দিন আহমদ প্রকাশ বাঘ শামসু সহ ওই সিন্ডিকেটের অনেকে এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে জানা গেছে। এসব অভিযোগ সত্য নয় দাবী করে শামশুদ্দিন আহমদ বৃহস্পতিবার বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র। তবে মাত্র ২-৩টি মামলা রয়েছে, তাও কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী বা ইয়াবার গডফাদার যতই শক্তিশালী হোক তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
Posted ১:১২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২২ জুন ২০১৮
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh