দীপক শর্মা দীপু | রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৯
‘কক্সবাজারের হেরিটেজ হোটেল শৈবাল ওরিয়ন গ্রুপকে দেয়া যাবেনা। শৈবালে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের যে নীল নকঁশা তা কক্সবাজারবাসী কখনো হতে দেবেনা। এই ক্ষেত্রে ওরিয়েন্ট গ্রুপকে সরাসরি ‘না’ বলে দিতে হবে। শৈবালে পর্যটন উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। সরকারের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তুলতে হবে বঙ্গবন্ধু ট্যুরিষ্ট কমপ্লেক্স। আর কোন ভাবে ওরিয়েন গ্রুপের মতো অন্য কোন গ্রুপকে কক্সবাজারের জমি বরাদ্ধ বা ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া যাবেনা। যদি এরকম অযৌক্তিকভাবে কক্সবাজারের সম্পদ দেয়া হয় তাহলে কক্সবাজারের সচেতন মানুষ তা মেনে নেবেনা। অন্যদিকে সরকারের উন্নয়ন বিরোধী গোষ্ঠি এটাকে পূঁজি করে কক্সবাজারের চলমান অন্যান্য কর্মকান্ডের বাঁধা সৃষ্টি করবে।’ পর্যটন কর্পোরেশনের সভায় এমন বক্তব্য স্পষ্ট করে তুলে ধরেন কক্সবাজারপ্রেমী বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজারবাসীর এসব বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করা হবে বলে জানান পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির।
গতকাল ২৭ এপ্রিল সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার। পর্যটন সম্পদের উন্নয়ন বিষয়ক এই সভায় এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয়দের জন্য কোন পার্ক নেই এবং অভাব রয়েছে খেলার মাঠেরও। বানিজ্য মেলার জন্য কোন ফ্রি জোন নেই। এই অবস্থায় হোটেল শৈবালের কিছু জমিতে এসব চাহিদা পূরণ করা যাবে। অন্য জমিতে পর্যটনের উন্নয়নের স্বার্থে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তবে এই প্রাইভেট সেক্টরে না দিয়ে সরকার এই উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে পারে। তবে তিনি প্রত্যাশা করেন তার নির্বাচনি এলাকায় দেশি বিদেশী অর্থায়নে পর্যটনের উন্নয়ন হোক।
এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন মানে কক্সবাজার, আর কক্সবাজার পর্যটন মানে শৈবাল। তাই এই শৈবালকে উন্নয়নের নামে কোনোভাবে বিনষ্ট করা যাবে না। এভাবে বড় কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এতে হিতে বিপরীত হবে । যেখানে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হচ্ছে সেখানে তার সীমানার পাশে বহতল ভবন করা সম্ভব নয়। এমপি আশেক আরো বলেন, হোটেল শৈবাল নিয়ে গত এক বছর ধরে টানা হ্যাঁচাড়া চলছে। এরকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সরকার বিরোধী মহল নানা ভাবে সুযোগ নিতে পারে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, শৈবাল হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত জায়গা। তাই হোটেল শৈবালে বঙ্গবন্ধু ট্যুরিষ্ট কমপ্লেক্স স্থাপন করা হোক। যেখানে সব কিছু হবে ইকো ট্যুরিজম। শৈবালের পুকুর ঘিরে পাখির অভায়্যারণ্য হবে। দুইদিকে হবে হৃদ। বঙ্গবন্ধু টাওয়ার, পার্ক, গার্ডেনসহ পরিবেশবান্ধব নান্দনিক স্থাপনা হবে। যা বাস্তবায়ন হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, শৈবালে বঙ্গবন্ধু কনভেনশন হল করলে পর্যটনের উন্নয়ন আরো বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, কক্সাবজারের সমুদ্র পাড়ের সব জায়গা বাহিনীরা তাদের কাজে নিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয়দের জন্য কোন জমি নেই। নেই কোন শিশুপার্ক। এই অবস্থায় শৈবাল বেসরকারি খাতে দেয়া হলে এটি হবে আত্মঘাতি।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের কর্মকর্তা লে.কর্ণেল আনোয়ার, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান, মুক্তিযোদ্ধা মো: আলী, সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, জেলা জাসদ সভাপতি নইমুল হক চৌধুরী টুটুল,আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগ নেতা রনজিত দাশ, সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, এনজিও ও ব্যবসায়ী নেতা আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, ও কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু।
কক্সবাজার পর্যটনের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ১৩৫ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হোটেল শৈবালের ইজারা নিয়ে গিলে খাওয়ার ষড়যন্ত্র আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। ৫ হাজার টাকার সম্পদ মাত্র ৫০ কোটি টাকায় ছিনিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছে ওরিয়েন গ্রুপ। এমন খবরে কক্সবাজারের সচেতন মহল পর্যটন কর্পোরেশনের আহবানে ডাকা সভায় উপস্থিত হন। উপস্থিত হয়ে সবাই ওরিয়েন্ট গ্রুপকে শৈবালের জমি ব্যবহার না করার পক্ষে
সোচ্চার বক্তব্য রাখেন। সবাই এক বাক্যে ওরিয়েন্ট গ্রুপকে ‘না’ করে দেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত তীরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ হচ্ছে হোটেল শৈবাল। এমন হাজার কোটি টাকার সম্পদ মাত্র ৬০ কোটি টাকার বিনিময়ে পাবলিক পার্টনারশিপের মাধ্যামে লিজ নিতে চায় ওরিয়ন গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এমন খবরে ফুঁসে উঠে কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক সমাজ। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপিসহ এই চুক্তির বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ হয়েছে এই শহরে। কক্সবাজারবাসীর চাপের মুখে তুলে ফেলছিল ওরিয়ন গ্রুপের সাইন বোর্ডও। এর পর থেকে অনেকটা নীরব ছিল ওরিয়ন গ্রুপ। তবে ভেতরে ভেতরে তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
এরই ধরাবাহিকতায় অভিজ্ঞ হোটেল শৈবাল ম্যানেজার সৃজন বিকাশ বড়–য়াকে অনেকটা শাস্তিমূলক বদলী করে রাঙ্গামাটিতে। তার স্থলে যোগ দিয়েছেন ওরিয়ন গ্রুপের সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে কথিত পর্যটনের কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান নামে একজন। সূত্রে জানা যায়, যখন কক্সবাজারের মানুষ শৈবাল রক্ষায় আন্দোলন করেছে ও বর্তমানে হোটেল শৈবালে যোগ দিতে আসা মুস্তাফিজুর রহমান ওরিন গ্রুপের লোকজনের সাথে নানাভাবে পক্ষ নেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই খবর পেয়ে কোনভাবে মানতে নারাজ শৈবাল রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দরা।
Posted ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh