তারেকুর রহমান | মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার এজাহার ও চার্জশীটের গড়মিল নিয়ে কথা বলেছেন আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। এজাহার, চার্জশীট কিংবা বিভিন্ন রিপোর্টে ভিন্ন ভিন্ন তথ্যে ওসি প্রদীপকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে এই সিনিয়র আইনজীবীর দাবি।
রবিবার (১৩ জুন) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে সিনহা হত্যা মামলার আসামী ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উপ-পরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিতের জামিন আবেদন করা হলে আদালত তাদের আবেদন শুনানির জন্য ২৭ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ শিক্ষিত ছেলে। সৎ ও সাহসিকতার জন্য একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চৌকস পুলিশ অফিসার। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও মাদকের বিরুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ায় সরকার তাকে মহেশখালী থেকে মাদকের স্বর্গরাজ্য টেকনাফ পাঠিয়েছিলেন; মাদক নির্মূলের জন্য। ওসি প্রদীপ মহেশখালীতে থাকতে মাদক, চোরাচালান, নারী পাচারের বিরুদ্ধে যখন সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলো তখন মহেশখালী থানা থেকে ওসি প্রদীপকে টেকনাফ থানায় নিয়োগ দেয়া হয়। প্রদীপ তার অফিসিয়াল সিদ্ধান্তকে কার্যকর করে টেকনাফ থেকে মাদক, অপরাধ ও অপকর্ম প্রায় শূন্যের কোটায় নিয়ে যেতে থাকলে তখন মাদক ব্যবসায়ী ও ভিকটিম যারা আছে তারা ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। প্রদীপের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ খুন করার অপপ্রচার আছে, কিন্তু আসলেই ওসি প্রদীপ খুন করেছে এ রকম কেউ প্রমাণ করতে পারে নি। অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন থানায় অপরাধ তকমা দিয়ে বিভিন্ন জনকে ওসি প্রদীপ বানিয়ে ফেলে। ঠিক এভাবে সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপকে ফাঁসানো হয়।’
রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, ‘এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে নন্দ দুলাল মোটরসাইকেল নিয়ে সিনহার গাড়ির সামনে গিয়ে সিনহাকে থামালেন। এবং সিনহার মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য এসআই লিয়াকত তাকে গুলি করেন। পরে ওসি প্রদীপ এসে সিনহা বেঁচে আছে না; মরে গেছে এটা বলে সিনহার মুখে বুট জুতা দিয়ে জোরে জোরে পারা দেয়া হয়েছে। এগুলো এজাহারের কথা। কিন্তু চার্জশীটে রয়েছে ভিন্ন কথা। এজাহারে বলা হয়েছে ওসি প্রদীপ আসার আগেই লিয়াকতের গুলিতে মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আর চার্জশীটে বলা হয়েছে ওসি প্রদীপ এসে মেজর সিনহাকে গলাটিপে, বুট জুতা দিয়ে মুখে আঘাত করে মুত্যু নিশ্চিত করেছেন। অথচ বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ওসি প্রদীপ যে সিনহারর গলায় পা দিয়েছেন বা গলাটিপে ধরেছেন তার চিহ্ন কোথাও নেই। ফলে এখন দেখা যাচ্ছে- এজাহার সত্য হলে চার্জশীট মিথ্যা আর চার্জশীট সত্য হলে এজাহার মিথ্যা। আমি ঘটনা বিশ্লেষণ করেছি। দেখেছি মামলার এজাহার কেমন আছে এবং চার্জশীট কেমন আছে। এ পর্যন্ত আমরা অনেক গড়মিল লক্ষ্য করেছি। তবে দুঃখের বিষয় মেজর সিনহা মারা গেছেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমারও সত্যিই খারাপ লাগছে। তারপরও সাংবিধানিক অর্থে দেশের যেকোন নাগরিকের আইনের সমান আশ্রয়ের অধিকার আছে। অতএব আমরা চাই সুষ্ঠু বিচার হোক। সুষ্ঠুভাবে বিচারের প্রার্থনা আমাদের থাকবে। আগামী ২৭ জুন মামলার শুনানিতে আমরা আদালতের কাছে সিনহার প্রাথমিক রিপোর্ট, এজাহার ও চার্জশীটের গড়মিল তুলে ধরে ওসি প্রদীপের জামিন আবেদন করবো। আমরা চাই বিনা অপরাধে জাতির কেউ হয়রানির শিকার না হোক।
উল্লেখ্য, আবেদনের শুনানি করতে কক্সবাজার আদালতে এসেছেন এডভোকেট রানা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে একটি আইনজীবী প্যানেল। কিন্তু আদালত না বসায় সে শুনানি পিছিয়ে ২৭ জুন করার জন্য দিন ধার্য করা হয়। প্যানেলের অন্যান্যরা হলেন- এডভোকেট রতন চক্রবর্তী, এডভোকেট সুমীর দাশগুপ্ত এবং এডভোকেট দীর্ঘতম বড়–য়া প্রমুখ। গত ১০ জুন ওসি প্রদীপেরর আইনজীবী এডভোকেট মহিউদ্দিন এ জামিন আবেদন করেন। অপরদিকে গত ৯ জুন নন্দ দুলালের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ওসি প্রদীপের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। পূর্বে নির্ধারিত সময় না থাকলেও আসামি পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগামী ২৭ জুন এ জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।’
আদেবি/তারেকুর রহমান
Posted ১:০৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh