শহীদুল্লাহ্ কায়সার | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০১৯
কক্সবাজার শহরে এডিস মশার বংশ বিস্তারের মতো কোন পরিবেশ নেই। এখানকার পরিবেশে ম্যালেরিয়ার জীবানু বহনকারী মশা বংশ বিস্তার করে। ফলে এখানে ডেঙ্গু রোগ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
তারপরও ঢাকা কিংবা বাইরের জেলায় না যাওয়া স্থানীয়দের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এর অন্যতম কারণ বিমানবন্দর, বাস টার্মিনালসহ শহরে পর্যটকদের নিয়ে আসা বিলাসবহুল গাড়ি। বিশেষ করে যেসব যানবাহনে এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) থাকে সেসব গাড়ি। যেখানে সহজেই এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে কক্সবাজারে প্রবেশ করা দূরপাল্লার এসি ও নন এসি গাড়ি, পর্যটকদের সঙ্গে আনা বিলাসবহুল এসি গাড়িকে কক্সবাজারে প্রবেশের সময়ই মশকমুক্ত করাসহ বিমানবন্দরকে মশকিমুক্ত করা হলেই কক্সবাজার জেলা ডেঙ্গু মুক্ত হবে।
পাশাপাশি উল্লেখিত এলাকাগুলোতে বিশেষ সতর্কাবস্থা জারি করা প্রয়োজন। যাতে সবাই এই বিষয়ে সজাগ থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল দুইজন চিকিৎসক এই প্রতিবেদককে এমন তথ্য প্রদান করেন।
ওই চিকিৎসকের সূত্র ধরে উইকিপিডিয়ায় অনুসন্ধান করলে যার সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে এডিস মশার আয়ু উল্লেখ করা হয়েছে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস। যে সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা গাড়ির সঙ্গে এডিস মশা খুব সহজেই কক্সবাজারে প্রবেশ করতে পারে। পাশাপাশি পরিবেশের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিষয়ে জানার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মহিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করলেও পরে স্বীকার করেন, ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য বিমানবন্দর এবং বাস টার্মিনালে রেড এলার্ট জারি না করে এলার্ট (সতর্কতা) জারি করা প্রয়োজন। যদিও বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব ডেঙ্গু রোগিই ঢাকা থেকে রোগবহন করে এসেছেন দাবি ডাঃ মহিউদ্দিনের। সদর হাসপাতাল ঘুরে এই প্রতিবেদক তাঁর কথার পুরো সত্যতা খুঁজে পায়নি।
শহরের উত্তর নুনিয়াছড়ার বাসিন্দা মোবারক (৩৮) বলেন, অনেক বছর ধরে আমি ঢাকা যাই না। কক্সবাজারে মাছের ব্যবসা করে জীবীকা নির্বাহ করি। সপ্তাহখানেক আগে শরীরে প্রচ- জ¦র অনুভূত হওয়ার পাশাপাশি রক্ত বমি করি। এরপরই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসি। ডাক্তারদের পরামর্শে পরীক্ষা করানোর পর আমার শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। ৬ দিন ধরে আমি হাসপাতালে ভর্তি। এখন কিছুটা ভালো লাগছে।
মোবারকের মতো চিকিৎসাধীন আবু রাখাইনও ঢাকা যাননি। কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদ-ীর বাসিন্দা এই যুবক দীর্ঘদিন ধরে টেকনাফে স্বর্ণকারের কাজ করেন। ৫ দিন আগে হঠাৎ করে তাঁর শরীরে জ¦র দেখা দিলে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। পরে সেই চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্ত পরীক্ষা করালে তাঁর শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সেই থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল হয়েছে তাঁর ঠিকানা।
ঢাকা থেকে আসা মানুষের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলায় বসবাসকারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু ভাইরাস। গতকাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বসবাসকারীদের মধ্যে শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া, বাহারছড়া, গোলদিঘির পাড়, বাস টার্মিনাল, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ এবং ইদগাঁ এলাকায় বসবাসকারীদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস পাওয়া গেছে।
উল্লিখিত স্থানগুলোর বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে টেকনাফ, উখিয়া উপজেলা ছাড়াও শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া এবং গোলদিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ঢাকা, কিংবা চট্টগ্রামের মতো শহরে যাননি।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগির সংখ্যা। ডেঙ্গু আক্রান্ত পুরুষদের জন্য সদর হাসপাতালের পক্ষ থেকে একটি কক্ষ স্থাপন করা হলেও সেখানে রোগিদের ঠাঁই হচ্ছে না। জায়গা না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফ্লোরে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
গতকাল ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে স্থাপিত ডেঙ্গু কর্নারে ৯ জন পুরুষ চিকিৎসাধীন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আরো ৪ পুরুষ রোগিকে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন ৫ জন ডেঙ্গু রোগি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকালও হাসপাতালে ৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগি ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২জন নারী এবং ৪ জন পুরুষ। উল্লিখিতরাসহ গতকাল রাত ৯ টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগি চিকিৎসাধীন।
Posted ১:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh