এস.কে.লিটন কুতুবী, কুতুবদিয়া | রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯
মানুষ জন্ম থেকে আরাম আয়াসে বসবাস করার জন্য অনেক স্বপ্ন দেখে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা প্রধান হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে কুতুবদিয়া দ্বীপে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের বসবাস হলেও দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেষে জেগে উঠা প্রায় ৫’শ বছরের পুরনো দ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠা সাগর বেষ্টিত চরের নামকরণ করা হয় কুতুবদিয়া দ্বীপ। তা বাংলাদেশ মূল খূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন । নাগরিক সুবিধায় শতভাগ বিদ্যুৎ সফলতায় কুতুবদিয়া দ্বীপে জাতীয় গ্রীড লাইনের আওতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া স্বপ্ন ছিল বর্তমান আ’লীগ সরকারের অঙ্গিকার।
শুনা যাচ্ছে আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে কুতুবদিয়া দ্বীপেও জাতীয় গ্রীড লাইনের আওতায় আসতেছে। তা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ দ্বীপবাসীর। যেহেতু সন্দ্বীপের মতো দ্বীপে ১৬কিলোমিটার সাগর পথে মেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, সেখানে কুতুবদিয়া
চ্যানেল তিন থেকে চার কিলোমিটার সাগর পথ দিয়ে গ্রীড লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা বর্তমান সরকারের কোন ব্যাপার নয় বলে দাবী করেন কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছাফা বিকম।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদের স্বাক্ষরিত ৭ সদস্যের গঠিত একটি টিম গত মার্চ মাসে কুতুবদিয়া দ্বীপে কিভাবে সহজে জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে যান। এ কমিটিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীসহ গুরুত্বপূর্ণ ৭জন উচ্চ পদস্থ কর্তা ছিলেন।
এ ছাড়াও গত ১১মার্চ কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর কাদের গনী স্বাক্ষরিত কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে কুতুবদিয়া দ্বীপকে সাব-মেরিন ক্যাবল দ্বারা জাতীয় গ্রীডের সহিত সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক সময়ে একটি শক্তিশালি জেনারেটর মেশিন ক্রয়ের জন্য আবেদন করেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে প্রকাশ, কুতুবদিয়া দ্বীপের উপজেলা সদরের একটি ৫’শ কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর রয়েছে। ঐ জেনারেটর পুরনো হওয়ায় ৩’শ কিলোওয়ার্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। দ্বীপের আবাসিক অনাবাসিক বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ৬৫০ জন। এসব গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুৎ চাহিদা ৪’শ কিলোওয়ার্ড। বর্তমানে বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় নিয়মিত গ্রহকরা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।
কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গবে মাতবর জানান, বর্তমানে যান্ত্রিক ক্রুটির কারনে অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কুতুবদিয়া দ্বীপে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে এ বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকবে না বরং গ্রাহক সংখ্যা হাজার হাজার বৃদ্ধি পাবে।
আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ আবুল হাসনাত জানান, আমেরিকান তৈরী ৫’শ কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর মেশিনটি পর্যান্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। যারফলে লোড শেড়িং লাগা আছে। বর্তমানে কোন প্রকার বড়ঘোপ বাজার,উপজেলা পরিষদ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছেন সন্ধ্যা ৬ হতে রাত ১১টা পর্যন্ত।
বিদ্যুৎ মার্কেট এলাকার গ্রাহক জসিম উদ্দিন জানান, এ মার্কেটটি বিদ্যুৎ অফিসের নামে নাম করণ করা হয়েছে। কিন্তু ু এ মার্কেটের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না।
সরকারি বিদ্যুতের এ অবস্থা দেখে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। আবার ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে বলে মানবাধিকার কর্মী আছাদ উল্লাহ চৌধূরী জানান। কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধূরী বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপের অর্থনৈতিক ভাবে মাছ,লবণ,তরিতরকারি প্রচুর পরিমান উৎপাদন হলেও বিদ্যুতের অভাবে তা মজুদ বা স্টক করে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিনিয়তই উৎপাদনকারী কৃষক ,জেলে ও খামারীরা সিস্টেমের অভাবে লোকসান খাচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে গড়ে উঠছে না বরফ কল, সল্ট (লবণ) মিল,ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান, ড্রাই ডগ ইত্যাদি।
কুতুবদিয়া চ্যানেলের উপর দিয়ে জুলন্ত ব্রীজ করে দৃষ্টি নন্দন পর্যটন স্পট করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। এসব গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে প্রচুর পরিমান অর্থনৈতিক যোগান দিতে পারতো সরকারকে।
Posted ১:০১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh