শহীদুল্লাহ্ কায়সার | শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৯
কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার কৃতি সন্তান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রয়াত এই শিক্ষাবিদই এদেশে প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন সি-উইড চাষের গুরুত্ব। এদেশে প্রথম চাষও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সফলতা দেখে যেতে পারেননি।
তাঁর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে গিয়েই সফলতার মুখ দেখতে চলেছেন এদেশের বিজ্ঞানীরা। সি-উইড চাষের পদ্ধতি আবিষ্কারে নেমে পড়লেন তাঁরা। এক পর্যায়ে সফলতার মুখও দেখলেন। উপলব্ধি করলেন সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন খাদ্যে সামান্য পরিমাণ সি-উইড যোগ করাতে উৎসাহ যোগাতে হবে। এটি পারলেই এদেশের মানুষকে দীর্ঘায়ু হওয়াসহ কঠিন রোগ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে।
এদেশের শিক্ষিত মানুষের কাছে সি-উইড সামুদ্রিক শৈবাল নামে পরিচিত। অন্যদিকে অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষেরা এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদকে ডাকেন ‘হেজালা’। অতি স্বচ্ছ পানিতে সামুদ্রিক এই উদ্ভিদ জন্মে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও এই উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায়না। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে এই সামুদ্রিক উদ্ভিদের এদেশের স্বর্গভূমি বলা হয়। এই এলাকার পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ বলে এখানে জন্ম নেয়া সি-উইডের পুষ্টিগুণও অন্যান্য উপকূলীয় এলাকার চেয়ে অনেক উন্নত।
প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া সি-উইড আহরণ করতে থাকলে এক সময় তা নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এ কারণেই সি-উইড চাষকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানিরা। তবে, এদেশের জলবায়ুগত কারণে মাত্র তিন মাস সি-উইড চাষ সম্ভব। সরকারও সি-উইডের গুরুত্ব অনুধাবন করে এদেশের সামুদ্রিক বিজ্ঞানিদের দায়িত্ব দিয়েছেন, যাতে সহজে সি-উইড চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়। এই কাজে সফল হয়েছেন এদেশের বিজ্ঞানীরা।
তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, প্রতিদিন খাবারে সামান্য পরিমাণ সি-উইড যুক্ত করতে পারলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করবেন। এটি এতোই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন যে, নিয়মিত খেতে পারলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো দূরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সম্ভব। ফলে যাঁরা নিয়মিত খাবেন তাঁদের এসব রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পাশাপাশি অস্টিও আর্থ্রাইটিস থেকে মুক্তি দেয়াসহ লিভার এবং কিডনি ভালো রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সি-উইড। নিয়মিত সি-উইড খেতে পারলে শরীরে বার্ধ্যকের ছাপ পড়বে না। চেহারাসহ পুরো শরীর থাকবে লাবণ্যময়। উন্নত বিশ^ বিশেষ করে জাপান, চীন, কুরিয়ার মতো দেশের মানুষের দীর্ঘজীবন লাভ করার গোপন রহস্যও এই সি-উইডে নিহিত। দেশগুলোতে সাধারণ মানুষ নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বিশেষ করে স্যুপ, পুডিং, সালাদে সি-উইড যুক্ত করেন।
সি-উইডের উপকারিতার পাশাপাশি এই সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে একটি সতর্কবাণীও দিয়েছেন এদেশের বিজ্ঞানিরা। পুষ্টির আশায় অতিরিক্ত সি-উইড খেতে মানা করেছেন তাঁরা। এটি এতোই পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য যে, বেশি পরিমাণে খেলে শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি যুক্ত হবে। যা মানবদেহ সহজে গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে, ডায়রিয়াসহ নানা ধরণের সংক্রামক ব্যাধি দেখা দিতে পারে। কিন্তু সামান্য পরিমাণ খেলেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরা খেলেও দেখা দেবেনা কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া।
বিজ্ঞানি জাকিয়া হাসান বলেন, “আমি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সি-উইড রাখি। আমার সন্তানেরা নিয়মিত খাদ্যের সাথে সি-উইড খাচ্ছে। শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের জোগান দিতেই আমার পরিবারের খাবার তালিকায় নিয়মিত সি-উইড যুক্ত করেছি।” প্রত্যেক মানুষের উচিত দীর্ঘজীবন এবং দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত সি-উইড খাওয়া।
এদিকে, সি-উইড চাষে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে উৎসাহ জোগাতে তিন দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলো বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। ২৪ এপ্রিল শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ গতকাল ২৬ এপ্রিল শেষ হয়। বাংলাদেশের উপকূলে সী-উইড চাষ এবং সী-উইড পণ্য উৎপাদন গবেষণা প্রকল্পের আওতায় ‘উপকূলীয় সী-উইড চাষ পদ্ধতি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র কক্সবাজারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ জুলফিকার আলী, সর্ববিজ্ঞানি ড. আব্দুর রাজ্জাক, ড. শফিকুর রহমান, মোঃ মাহিদুল ইসলাম, মোঃ মোজাম্মেল হক, জাকিয়া হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল হক, এবং আহমেদ ফজলে রাব্বি। সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ড. মো জুলফিকার আলী বলেন, ‘হেজালা’ কিংবা ‘শৈবাল’ যে নামেই ডাকা হোক সীউইড সমুদ্রের একটি অপার সম্ভাবনাময় সম্পদ। সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
Posted ৯:০৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh