শহীদুল্লাহ্ কায়সার | সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
নিষিদ্ধ হলো দেশের বহুল প্রচলিত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ রেনিটিডিন। পরীক্ষায় ওষুধটিতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়া গেছে। এই কারণে গতকাল (২৯ আগস্ট) বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই ওষুধ নিষিদ্ধ করে। এর আগে গত সপ্তাহে ভারতে এবং তারও অনেক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একই কারণে এই ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়।
নিওট্যাক, নিওসেপটিন -আর সহ বিভিন্ন নামে এদেশের বাজারে ওষুধটি বিক্রি করা হয়। কক্সবাজারে এই ওষুধের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পল্লী চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও রোগিদের এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পেটে সামান্য জ¦ালাপোড়া দেখা দিলেও অনেক সময় সাধারণ মানুষ ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধটি কিনেন।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলায় এই ওষুধের সর্বোচ্চ ব্যবহার দেখা যায়। ওই দিন জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে এই ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়। যে ক্যাম্পে জেলার শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কয়েক হাজার রোগিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেন। ২২ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেছিলেন, ক্যাম্প উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি বিনামূল্যে ৩০ লাখ টাকার ওষুধ সরবরাহ করেছে। যার মধ্যে ‘নিষিদ্ধ রেনিটিডিন’ ছিলো অন্যতম।
আওয়ামী লীগ পরিচালিত ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসেন কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ। যাদের বেশিরভাগকে রেনিটিডিনের পাশাপাশি, প্যারাসিটামল এবং এসিক্লোফেনাকের মতো ব্যথানাশক ওষুধ প্রদান করা হয়। ৫ শতাধিক রোগিকে গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসার জন্য দেয়া হয় রেনিটিডিন। আজ ১ মাস ৬ দিন পার হলো। এই দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পে চিকিৎসকদের দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে রোগিরা ‘রেনিটিডিন’ সেবন করে চলেছেন। গতকাল নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোন চিকিৎসকই জানতেন না ওষুধটিতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান রয়েছে!
দীর্ঘদিন ধরে রেনিটিডিন সেবনকারীদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু ? গতকাল এই বিষয়ে জানার জন্য চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হলেও কেউ এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। আজ থেকে ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন কিনা। সেই বিষয়েও গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে অনীহার কথা জানান দুইজন চিকিৎসক।
২৩ আগস্ট আওয়ামী লীগের চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসা প্রদানকারী মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহাম্মদ শামশুদ্দিন বলেন, “রেনিটিডিনে ক্যান্সারের উপদান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন রোগিকে এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিচ্ছি না। ” সম্প্রতি দেশের দুই একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির প্রস্তুতকৃত রেনিটিডিনে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদান থাকার বিষয়টি জেনেছি। যা ২৩ আগস্টের অনেক পরে পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের চিকিৎসা ক্যাম্পে তিনি নিজেও রোগিদের ‘ নিষিদ্ধ রেনিটিডিন’ সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান ডাঃ শামশুদ্দিন। একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাধারণ মানুষকে ‘রেনিটিডিন’ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেবেন কিনা জানতে চাইলে ডাঃ শামশুদ্দিন বলেন, বিষয়টি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এখতিয়ারভুক্ত। তাই এই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কোন ধরনের মন্তব্য প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে বলেন, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিলে ভালো হবে।
দেশবিদেশ/নেছার
Posted ১:৩১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh