মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: | শনিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
মো.হুমায়ুন কবির। পেশায় একজন মেডিসিন ব্যবসায়ী। চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর আকতার আহমদের ছেলে। ব্যবসার পাশাপাশি নানা প্রজাতির ফুল ও ফলের চাষ করতে ভালবাসেন তিনি। এই জন্য নিয়েছেন বিভিন্ন ট্রেনিং।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ক্রেলের মাধ্যমে অপর ৩৯ জনের সাথে পাঁচদিনের প্রশিক্ষণ নিই রাজশাহী আকাফুজি এগ্রিকালচার টেকনোলজী থেকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রফেসর ডক্টর মঞ্জুরুল ইসলামের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসায়ী তরুণ হুমায়ুন নিজ এলাকা খুটাখালীতেই স্ট্রবেরী চাষ শুরু করেন।
বাংলাদেশেও স্ট্রবেরী চাষ শুরু হয়েছে বেশ ক’বছর ধরে। কক্সবাজারের চকরিয়ায় চাষ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। কম লগ্নীতে অধিক মুনাফা হওয়ার পাশাপাশি সৌন্দর্য্য ও জন চাহিদা থাকায় তরুণরা স্ট্রবেরী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাঝে মধ্যে লোকসান দিতে হওয়ায় চকরিয়ার কয়েকজন তরুণ স্ট্রবেরী চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন। এর মাঝেও শখের বসে স্ট্রবেরী চাষ অব্যাহত রেখেছেন চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীর হুমায়ুন কবির।
তিনি বলেন, প্রথম বছর আমি ৫০ হাজার টাকা পুজি খাটিয়ে প্রায় স্ট্রবেরী উৎপাদনের পর আত্মীয়-পরিজনদের উপহার দেয়ার পরও ১ লাখ টাকা মুনাফা হয়। কিন্তু গতবছর অকাল বর্ষণে পানি জমে স্ট্রবেরী ক্ষেত চার-পাঁচদিন তলিয়ে থাকায় লোকসান গুনতে হয়।
হুমায়ুন আরো বলেন, এবছর অন্যেও কাছ থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে ১৩ শতক জমি বর্গা নিয়ে স্ট্রবেরী চাষ করেছি। এই জমিতে লাগিয়েছি ১ হাজার ৩’শ চারা। রাজশাহীর ট্রেনিং সেন্টার আকাফুজি এ্যগ্রিকালচার টেকনোলজী থেকে প্রতিটি চারা ২২ টাকা করে ক্রয় করি। শ্রমিক, ঘেরা-ভেড়া, সার-সেচসহ বিভিন্ন খাতে ১৩ শতক জমিতে স্ট্রবেরী চাষে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। চারার বয়স এখন ৫৫দিন। এসময়ে ফুল-ফল এসেছে। দু’একটি করে পাকতে শুরু করেছে। পক্ষকাল পর পুরোদমে ফল পাকবে। প্রতিদিন এই সল্প জমির খেত থেকে ৫ থেকে ১০ কেজি ফল উঠানো যাবে। টানা দুই মাস ফল তোলা যাবে গাছ থেকে। এই এই ফল স্থানীয় ও কক্সবাজার শহরে বিক্রয় করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রতি কেজি স্ট্রবেরীর পাইকারী দরে বিক্রয় করি ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা করে। যারা আমার কাছ থেকে ক্রয় করে তারা খুচরা হিসেবে বিক্রয় করে ৬’শ থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত। শুরু থেকে এবছর পর্যন্ত শখের বসে করলেও আগামী বছর অধিক জমি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরী চাষ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমি এবার কেমারোসা প্রজাতির স্ট্রবেরী চাষ করেছি। আগামী মৌসুমে কয়েকটি প্রজাতির চাষ একসাথে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, ক্রেলের মাধ্যমে ২০১৫ সালের বেকার পাহাড় ঘেষা বাসিন্দাদের মধ্যে ৪০জন তরুণ প্রশিক্ষণ নিলেও এবছর পুরো কক্সবাজারেই মাত্র দুইজন চাষ করেছেন। চকরিয়ার খুটাখালীতে হুমায়ুন ও কক্সবাজারের ইনানীতে আরেকজন। প্রথমে কাকারা ও লক্ষ্যারচরে দুইজন চাষ করলেও তারাও এবছর ওই চাষ থেকে বিরত রয়েছেন। মুলত তামাকের আগ্রাসনে জমি পাওয়া দুষ্পাপ্য হওয়ায় স্ট্রবেরীসহ বিভিন্ন ফল-ফুলের চাষ করা কঠিন হয়ে পড়েছে আগ্রহীদের। তামাক চাষীরা প্রতি কানি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জমি বর্গা নেয়ায় ফল ও সবজি চাষীদের পক্ষে ওই পরিমাণ টাকায় জমি নেয়া সম্ভব হয়না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁচা গাছসহ ফুল-ফলের রঙ্গও সবুজ। পাকা ফলের কিছু গাঢ় হলুদ হলেও বেশিরভাগ লাল রংয়ের আভা ছড়ায়। টক-মিষ্টির মিশ্রণে রসালো ফলটি নজর কাড়ে সবার। তবে দামের কারণে নি¤œবিত্তরা খেতে পারেনা তেমন। নানা প্রজাতির ফলের বীজ থেকে ক্রস কানেকশনের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা এই ফলটির নাম ‘স্ট্রবেরী’। জাপান-কানাডাসহ শীত বা নাতিশীতুষ্ণ এলাকায় এই ফলের চাষ হয় বেশি। তবে,স্ট্রবেরী ফল খেকো হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে আফ্রিকার একটি দেশ উগান্ডায়।
সরকারী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও প:প কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ ছাবের বলেন, স্ট্রবেরী একটি দুষ্পাপ্য ফল। এ অঞ্চলের খুবই কম হয়। কিন্তু এই ফল থেকে ব্যাপক উপকারীতা পায় মানুষ। এফলে রয়েছে ভিটামিন- কার্বহাইড্রেট, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন মিনারেল। এ ফল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।চকরিয়ায় এবছর স্ট্রবেরী চাষ হয়েছে কিনা জানেন না উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো.আতিক উল্লাহ। তিনি বলেন, কোন চাষ পাঁচ শতাংশের নিচে হলে আমাদের রেকর্ডে থাকেনা। কোন চাষী নিজ থেকে যোগাযোগ করলেই জানতে পারি এবং প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করি।
Posted ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh