তারেকুর রহমান | মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে কক্সবাজারে চলছে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব। করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে এবার নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলছে ৩ দিনব্যাপী রাখাইনদের মন মাতানো এই উৎসব।
রোববার (১৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে রাখাইন পল্লীগুলোতে সবাই ব্যস্ত আনন্দ উদযাপনে। উৎসব চলবে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
রোববার বিকেলে কক্সবাজার শহরের পেশকার পাড়া প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসবের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ।
রাখাইনদের নতুন বর্ষ ১৩৮৪ মগি বা রাখাইন সাল। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষ বরণের এই উৎসবকে বলা হয় ‘সাংগ্রেং পোয়ে’। সাংগ্রেং পোয়ে বা জলকেলি আবার কারো কারো ভাষায় মৈত্রী পানি বর্ষণ।
শনিবার রাখাইন বর্ষ ১৩৮৩ কে বিদায় জানিয়ে নতুন ১৩৮৪ কে বরণ করতে রাখাইন সম্প্রদায় মেতেছে জলকেলির প্রাণের উৎসবে। এতে রাখাইন পল্লীর প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ।
কক্সবাজার শহরের পূর্ব মাছ বাজার, পশ্চিম মাছ বাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাং পাড়া, হাঙর পাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও চাউল বাজার এলাকায় এক ডজন মন্ডপ তৈরি করেছেন। এছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই আয়োজন চলছে। কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি টেকনাফ, চকরিয়া ও মহেশখালীর রাখাইন পল্লীগুলোতে মোট ৭০টি প্যান্ডেলে চলছে এই উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি মণ্ডপ করা হয়েছে।
রাখাইন তরুণী মং টিন রাখাইন জানান, জলে-জলের শুভ্রতায় খোঁজে নিয়ে স্নিগ্ধ হওয়ার অন্য রকম প্রয়াস এটি। এ উৎসব কোনো ধর্মীয় রীতির ভিত্তিতে নয়। সামাজিক রীতিমতে, রাখাইন নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রাখাইনরা একে-অপরকে পানি ছোড়ার খেলায় মেতে উঠেছে। তারপরও নতুন বছর যেন ভালো কাটে, এজন্য আয়োজন করা হয় নানা অনুষ্ঠানের।
রাখাইন তরুণী মং হ্লা জানান, শুরুর দিন সকালে এলাকাভিত্তিক শোভাযাত্রা বৌদ্ধ কিয়াং এ যায়। এক ঘণ্টা বাদক বিশেষ ঘণ্টা বাজিয়ে কিয়াং-সহ প্যান্ডেল পরিদর্শনের নিদের্শনা দেওয়া হয়। এই শোভাযাত্রায় তরুণরা মাটির তৈরি কলসি ও পেছনে বয়স্ক নারী-পুরুষ ‘কল্প তরু’ বহন করে। কিয়াং থেকে শোভাযাত্রাটি প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ায় আর পানি নিক্ষেপ খেলায় মেতে উঠে। প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো এসব তরুণদের নাচে গানে আনন্দের পাশাপাশি তাদের ঐতিহ্যবাহী পানীয় পান করে। একে অপরকে পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে পুরাতন বছরের সকল পাপ, ক্লান্তি আর অসঙ্গতি মুছে-ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে তাদের এ আয়োজন।
রাখাইন তরুণ আবেয় মং জানান, আদিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিকভাবে সাংগ্রে পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে সবাই। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
Posted ১:১৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল ২০২২
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh