শহীদুল্লাহ্ কায়সার | বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯
দীর্ঘ ৬৫ দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো। উঠে গেলো মাছ আহরণের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। আজ ২৪ জুলাই থেকে জেলেদের জন্য উন্মুক্ত হলো বঙ্গোপসাগরের দ্বার। ফলে স্বদেশি জেলেরা বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে মাছ আহরণে আর কোন বাধার সম্মুখীন হবেন না।
দীর্ঘ দুই মাসের অধিক সময় অবর্ণনীয় দুঃখের মধ্যে দিনাতিপাত করেছেন জেলেরা। সরকারি সহায়তা বলতে ছিলো প্রতি পরিবারের জন্য মাত্র ৩০ কেজি চাল। যা দীর্ঘ ৬৫ দিনের জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরও আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। একদিন হয়তো সুসময় আসবে। সেই সুসময়ের যাত্রা শুরু হওয়ায় তাই জেলেদের মধ্যে বিরাজ করছে বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় জেলে পরিবারগুলোতেও খুশির অন্ত নেই। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে বাঁকখালী নদীতেও ইলিশ পাওয়ার সংবাদ তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। ফলে তাঁরা আশা করছেন ইলিশের এই ভরা মৌসুম নিরাশ হতে হবে না। বঙ্গোপসাগরে জাল ফেলে ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়েই ডাঙ্গায় ফিরতে পারবেন।
গতকাল বিকেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানালেন, কক্সবাজার জেলায় বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ইঞ্জিনচালিত ট্রলার রয়েছে। কিন্তু আজ ২৪ জুলাই শুধু ২০ থেকে ৩০ ভাগ ট্রলার মাছ আহরণে বঙ্গোপসাগরে যেতে পারবে। কেন এই অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার কারণে বেশিরভাগ ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক মালিক মেকানিক্যাল কাজ করে ইঞ্জিন সচল করতে পেরেছেন। এখনো মেরামতের পর্যায়ে অনেকের ট্রলারের ইঞ্জিন। ফলে সব ট্রলারকে সাগরে যেতে হলে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
এদিকে, জেলেদের মধ্যে উৎসবের আমেজের মধ্যেই বিরাজ করছে আতঙ্ক। এই আতঙ্কের অন্যতম কারণ জলদস্যু। ইতোমধ্যে বঙ্গোপসাগরে দস্যুবৃত্তিতে লিপ্ত একাধিক দস্যু বাহিনী সক্রিয় হয়েছে। সোনাদিয়া এবং কুতুবদিয়া মোহনায় অবস্থান নিয়েই মাছ ধরার ট্রলারে দস্যুবৃত্তি চালায় তারা। অনেক সময় দস্যুবৃত্তির পাশাপাশি মাঝি-মাল্লাদের হত্যাসহ মারাত্মকভাবে জখমও করে জলদস্যুরা। ফলে জীবিকার সন্ধানে গিয়ে যেন প্রাণ হারাতে না হয়। এই ভয় তাড়া করছে জেলেদের।
এ ব্যাপারে আলাপ করা হলে একজন বোট মালিক জানালেন, দস্যুদের আক্রমণের সময় খবর দেয়া হলেও কোস্টগার্ড সদস্যরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। নিজের কার্যসীমার অজুহাত দেখিয়ে অপারেশন পরিচালনা করতে চান না। এই কারণে কোস্টগার্ড সদস্যদের কার্যসীমায় কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে জেলেরা বঙ্গোপসাগরে যেতে চায় না বলেও জানান তিনি।
সরকারি হিসেবে অনুযায়ী, বর্তমানে কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৪৯ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। যান্ত্রিক নৌযান রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের অধিক। অযান্ত্রিক নৌযান রয়েছে প্রায় দুই হাজার।
Posted ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh