দীপক শর্মা দীপু | শনিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
একদল জেলে নৌকা থেকে জাল ফেলে সাগর থেকে মাছ ধরছে, দুইজনে জাল কাঁধে নিয়ে নৌকায় যাচ্ছে , কেউ মাছ ( ভার ) বহন করে ঘরে ফিরছে, মাছ পেয়ে ছোট ছেলে মেয়েরা খুশি, জেলেদের সারি সারি কুটির, জেলেদের বউরা উঁকি দিচ্ছে। পুরো জেলে পল্লীতে খুশীর আমেজ বইছে। কারণ জেলে পল্লীর কাছেই সাগর তলে বিদ্যা দেবী সরস্বতী এসেছেন। নতুন পোশাক না থাকলেও যার যেমন পোশাক আছে তা পরে সবাই সরস্বতী দেবীর কাছে যাচ্ছে আর পূজোয় প্রার্থনা করছে। দেবী সরস্বতী সাগর তলে প্রবালের উপর বসে আছেন। এটি বাস্তব না হলেও বিদ্যা দেবী সরস্বতী পূজায় এমন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী মন্দির ঘোনারপাড়া কৃষ্ণানন্দধাম প্রাঙ্গণে। সরেজমিনে এমন দৃশ্যে আরো দেখা যায়, পানির নিচে প্রবালের উপর বসে আছে সরস্বতী দেবী। উপরে নিচে চারিদিকে নীল জলরাশি। মন্দির প্রাঙ্গণ দেখে মনে হবে এটি সাগর , সাগর পাড় আর সাগর পাড়ের কোন জেলে পল্লী।
এমন দৃশ্য অবলোকন করে বিশিষ্ট ধর্মীয় বক্তা ও গবেষক উখিয়া ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অজিত দাশ বলেন,
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিখ্যাত” পদ্মা নদীর মাঝি ” উপন্যাসে বহুল আলোচিত উক্তি ” জেলে পল্লীতে ঈশ্বর থাকেন না” এমন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এই থিমের মাধ্যমে জানান দেয়া হয়েছে ঈশ্বর সবখানে থাকেন। এখন জেলে পল্লীতে ঈশ্বর থাকেন। আগে জেলেদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না , দারিদ্র্যতা লেগেই থাকত। তাই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসে ” ঈশ্বর জেলে পল্লীতে থাকেন না” এমন উক্তি করেছেন। এখন জেলেদের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে। আর্থিক অবস্থা যাই থাকুক না কেন এখন জেলে পল্লীতেও পূজো হয় । ভগবান সবখানে থাকেন। এই সরস্বতী পূজায় এমন ধারণা দেয়া হয়েছে।
প্রতিমা শিল্পী কার্তিক পাল, ডিজাইনার বিশ্বজিৎ আইচ, মিথুন সিকদার ও রিমন দে বাবু জানান, ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে এই কক্সবাজারের জেলে পল্লীর সরস্বতী পূজা থিম তৈরি করতে। দেবী সরস্বতীসহ ২০ চরিত্র মাটি দিয়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বাঁশ, ছন , মাটি, জাল, ছোট ছোট বয়া দিয়ে শৈল্পিকভাবে সাজানো হয়েছে। গেইট থেকে শুরু করে প্রতিমা মন্ডপ পর্যন্ত জেলে পল্লী ও সাগরের অবয়ব তৈরি করা হয়েছে।
পূজা কমিটির সভাপতি অতনু পাল হিমু ও সাধারণ সম্পাদক অমিত পাল জানান, এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল সরস্বতী পূজা। এই পূজোর মাধ্যমে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী জেলে পল্লীকে উপস্থাপনা করা হয়েছে। ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এবার বিশেষ আনন্দ পাবে ।
জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত পাল বিশু বলেন, ধনী গরীব সবার জন্য যে ঈশ্বর সমান তা বুঝানো হয়েছে। ধনীদের প্রাসাদে যেমন ঈশ্বর থাকেন তেমনি গরীবের কুটিরেও ঈশ্বর থাকেন।
পূজার প্রধান সমন্বয়কারী অজয় দাশ বলেন, প্রতিবছর সব মন্ডপে একধাসের পূজো হয়। তাই এবার ভিন্ন ধাসে ভিন্ন থিমে সোনালী সংঘের উদ্যোগে পূজোর আয়োজন করা হয়েছে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্রী পুষ্পিতা দাশ এই মন্ডপের ব্যতিক্রম থিম দেখে খুশি হয়ে বলেন, এবার এই মন্ডপের পূজোতে দারুণ আনন্দ হবে। রাতে জেলে পল্লী কেমন হয় তাও দেখতে পাবো।
৪ ফেব্রুয়ারি দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে মন্ডপে অধিষ্ঠিত করা হয়।
৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যা দেবী সরস্বতী পূজা সকাল থেকে শুরু হবে।
সকালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, দেবি পূজা, সন্ধারতি। ৬ ফেব্রুয়ারি হবে দেবির বিদায় তথা বিসর্জন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর জানান, জেলায় এবার ৫ শতাধিক সরস্বতী পূজার আয়োজন হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরশহরে
৮২ টি মন্ডপ হয়েছে।
Posted ১:৩৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh