| বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
রেজাউল করিম রেজা, পেকুয়া
উত্তরের শীতল হাওয়ায় থর থর করে কাঁপছে হানিফা,মোঃ ইয়ামিন ও আফিফার সারা শরীর। তাদের পরনে হালকা পাতলা জামা। একটু শীত থেকে রক্ষা পেতে মায়ের আড়াল হয়ে পলিথিন মোড়ানো কুঁড়ে ঘরের সামনে বুকে হাত দিয়ে ছিলো তারা।
আরো কাছে গিয়ে চোখে পড়ে,কুঁড়ে ঘরটিতে ঠান্ডা বাতাস ছেড়া পলিথিন ভেদ করছে। তারা জানিয়েছে রাতে মায়ের শাড়ির ছেড়া আঁচলে ঘুমায় তারা। এ যেন একটু শান্তি,একটু হালকা গরম পরশ। কাটছে এভাবে তাদের মানবতার জীবন যাপন।
এক বছর আগে স্বামী দিদারুল ইসলাম নিরুদ্দেশ। অভাব,অনটন আর একবুক জ্বালা যেন ঝেঁকে বসেছে। শত কষ্টের মাঝেও বেঁচে থাকতে চায় কহিনুর আক্তার। হানিফা (৭),মো.ইয়াসিন (৫) ও আলিফা (১) তার তিন সন্তান। ওরাই কহিনুরের একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন। ওরাই তো পৃথিবীর সমস্ত সুখ, হাসি আর আনন্দ। ওরা রাতে ঘুমায় মায়ের শাড়ির আঁচলে। কি আর করবে? এমন শীতে তো গরম কাপড় জুটেনি তাদের কপালে।
মুজিবশতবার্ষিকীতে ভুমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই ঘর জুটেনি তার ভাগ্যে। কনকনে শীত আর ঠান্ডা বাতাস থেকে মুক্তি পেতে মায়ের শাড়ির আঁচল যেন শান্তির পরশ। এ যেন এক মানবেতর জীবন কহিনুরের।
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মটকাভাঙ্গা এলাকার দিদারুল ইসলামের স্ত্রী কহিনুর আক্তার। গত ৮বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। তাদের সংসারে রয়েছে ফুটফুটে তিনটি শিশু। এরই মধ্যে কহিনুর আক্তারকে ফেলে স্বামী দিদারুল ইসলাম নিরুদ্দেশ হয় বছর এক আগে। এক বছর বয়সী শিশু আলিফা তখন মায়ের গর্ভে। এখনো বাবার চেহেরা দেখার সুযোগ হয়নি আলিফার। নানা অভাব অনটনে দিনেপাত করছে কহিনুর।
এমন শীতে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নিয়ে চিন্তায় ভুগছে ওই মহিলা। দিনে যেমন তেমন সন্ধ্যা হলেই দুরহ জীবন তাদের। শীতের সাথে সারা রাত যুদ্ধ তাদের। ঘরে তিনদিকে নেই বেড়া। বেড়ার পরিবর্তে দিয়েছে পলিথিন। তাদের নেই শীত নিবারনের বস্ত্র, নেই কেনার সামর্থ। অন্যের বাড়ীতে কাজ করে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে কহিনুর। সে এখন সহায়সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব। আছে শুধু ফুটফুটে তিনটি শিশু সন্তান।
মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ছেড়া পলিথিন মোড়ানো একটি ছোট্ট ঘর। ঘরের পুর্বপাশে কুমির খাল। খালের পাশে খাস জমিতে কহিনুরের কুঁড়ে ঘর। দক্ষিন ও পশ্চিম দিক খোলামেলা। বাড়ি লাগোয়া একটি অস্বাস্থ্যকর ট্রয়লেট। বিশুদ্ধ পানির কোন ব্যবস্থা নেই। নেই কোন বিদ্যুত সুবিধা। উত্তর পাশে সামান্য দুরে একটি বসতবাড়ি। বাহিরের ঠান্ডা বাতাস ছেড়া পলিথিন ভেদ করছে।
কহিনুর বেগম জানান, আমার স্বামী তিন শিশুসহ আমাকে ফেলে পালিয়ে যায়। এনজিও ‘শক্তি’ থেকে ঋন নিয়ে ঘরটি দুই বছর আগে বেঁধেছি।খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে বাচ্চাদের খাওয়ায়। শীত সহ্য করতে না পেরে রাতে শাড়ির আঁচলে ঘুমায় তারা। রাতে শীতের যন্ত্রনায় ছোট্ট বাচ্চাদের কান্না থামানো যায়না। আমি বিত্তবান ও মানবপ্রেমীসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
Posted ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh