তারেকুর রহমান | রবিবার, ২০ জুন ২০২১
রোহিঙ্গা সংকট কক্সবাজারবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রবেশের পর সমস্যা আরো জটিল হয়েছে। বিভিন্ন সহিসংতার ফলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা প্রবেশ করতেই আছে কিন্তু দু দেশরে বৈঠক হলেও প্রত্যাবাসনের কোনো নাম-গন্ধ নেই। বিশ্ব শরণার্থী দিবস সম্পর্কে অবগত নয় কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবিরের আশ্রিত রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফে ৩২টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। যদিও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। সকলেই অধির আগ্রহে ছিল- দু দেশের সমঝোতার মাধ্যমে কোনো ধরনের সংকট ছাড়াই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাবে এবং সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হবে না। কিন্তু এই সমঝোতার কোনো বাস্তবিক প্রয়োগ এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। রোহিঙ্গারা বলছে, ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস কী তা আমরা এখনো স্পষ্ট জানি না। তবে মিয়ানমার সরকার যদি আমাদের কেড়ে নেওয়া সহায়সম্পদ ফিরিয়েদিয়ে দাবি মেনে নেয়, তবেই আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাবো, এর আগে নয়।’শুধু বাংলাদেশ চাইলে হবে না, মিয়ানমারকে রাজি হতে হবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে বল প্রয়োগ করলে কেবল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার পথ খুলতে পারে বলে মনে করছে রোহিঙ্গারা। এদিকে স্থানীয়রা বলছে, ‘বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা দীর্ঘ বছর ধরে উখিয়া- টেকনাফে অবস্থানের কারনে স্থানীয় ও দেশের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা মাদক,মানব পাচারসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।’ এ কারনে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয়রাও। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছে তারা। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা দিন দিন অপরাধ কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ছে। তারা অনেক স্থানীয় মানুষকে গুম-খুন করেছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের অপরাধ নিয়ে কথা বললে আমাকেও হুমকি দেয় এই সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। মাদক ব্যবসা, নারী পাচারসহ না অনৈতিক কাজে লিপ্ত তারা। তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন না করলে দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’ গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান। আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠন কিংবা সংস্থা নিজ স্বার্থের জন্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গাদের সেবামূলক কর্মকা- দেখিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে সুবিধা আদায় করছে এই সংস্থা গুলো।’ ২০১৭ সালে মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে এদেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিলেও এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার কাউকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ্ রেজওয়ান হায়াত জানান, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের প্রস্তুত করতেছি। তাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। যদি প্রত্যাবাসনের ডাক আসে তবে অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। শাহ্ রেজওয়ান হায়াত আরও জানান, ‘রোহিঙ্গাদের আমরা বুঝানোর চেষ্টা করছি যে এটি তাদের দেশ নয়। ডাক আসলে যেন তারা রাখাইনে ফিরে যায়। তারা যেন প্রত্যাবাসনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে। একই সাথে এটাও বলছি, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদেরকে যেন-তেন ভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না। রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নিরাপত্তার নিশ্চিত করার পর তাদের প্রত্যাবাসন করবে।’ উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রথম আশ্রয় নিয়েছিল ১৯৭৮ সালে। সে সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সবাই স্বদেশে ফেরত গিয়েছিল। এরপর থেকে কয়েকবার তারা মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সর্বশেষ তারা ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মিয়ানমারে ফেরত গেলেও বর্তমানে অবস্থানরত প্রত্যাবাসনের কোনো নাম-গন্ধ নেই।
Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২০ জুন ২০২১
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh