দেশবিদেশ প্রতিবেদক | রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২
কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ের দক্ষিণ গোয়ালিয়াপালং এলাকায় এক সৌদি প্রবাসীর মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্য তৈরি হয়েছে। স্ত্রীর পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে তাকে গলা চেপে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন স্থানিয়রা। হঠাৎ ওই প্রবাসীর মৃত্যুর পর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে এলাকারবাসীর মাঝে সন্দেহের উদ্যেগ হয়। এতে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘন্টা পুর্বে তড়িগড়ি করে দাফন করায় এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, হত্যা বলে দাবি করছেন এলাকার অনেকে। এছাড়াও ওই প্রবাসীর স্ত্রী ইয়াছমিনের সাথে বেলাল উদ্দীন নামে এক যুবকের পরকিয়া সম্পর্কের বিষয়টিও এলাকায় প্রকাশ রয়েছে বলে জানান স্থানিয়রা। স্থানিয়রা বলছেন, আবদুল্লাহ রশিদ (৫০) নামে ওই প্রবাসীর মৃতদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করলে প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।
গত মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারী) রাত ১২ টার দিকে ওই প্রবাসীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরেরদিন বুধবার বেলা ১১ টায় সময় নির্ধারণ করলেও তড়িগড়ি করে সকাল ৯টায় মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আবদুল্লাহ রশিদ (৫০) নামের ওই ব্যক্তি দীর্ঘ এক যুগ পুর্বে সৌদিআরব থেকে খুনিয়াপালং ইউনিয়নের দক্ষিণ গোয়ালিয়াপালং এলাকায় এসে বসবাস করে আসছিল। তার পিতা মাতা মিয়ানমারের হলেও সকলে সৌদিআরব বসবাস করেন। দ্বীর্ঘদিন দক্ষিণ গোয়ালিয়াপালং এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসার সুবাদে পাঁচ বছর পুর্বে ওই এলাকায় বসবাসরত আরেক রোহিঙ্গা নাগরিক কবির আহামদ বৈদ্যের মেয়ে ইয়াছমিন আকতারকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন বছরের একটি কন্যা শিশু রয়েছে। মৃত আবদুল্লাহ রশিদের স্বজনরা মাসে মাসে টাকাও পাঠাতেন। পাশাপাশি নিজস্ব ইজিবাইক চালিয়েও আয় করতেন।
স্থানিয়রা জানিয়েছেন, একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড পূর্ব গোয়ালিয়া এলাকার বেলাল উদ্দীনের সাথে মৃত আবদুল্লাহ রশিদের টাকার লেনদেন ছিলো। এই টাকা লেনদেন নিয়ে প্রায় তার ভাড়া বাসায় আসতো বেলাল উদ্দীন। এর মধ্যে আবদুল্লাহ রশিদের স্ত্রী ইয়াছমিনের সাথে বেলাল উদ্দীনের পরকিয়া সম্পর্ক তৈরী হয়। এ অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টিও এলাকার মানুষজনের মাঝে প্রকাশ পায়। কিন্তু বেলাল উদ্দীন প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ এসব বিষয়ে কথা বলতোনা। এক পর্যায়ে পাওনা টাকা ও পরকিয়া সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আবদুল্লাহ রশিদের সাথে বেলাল উদ্দীনের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় পূর্ব গোয়ালিয়া ব্রীজ এলাকায় দুজনের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। ওই দিন রাত ৮টার পর আবার আবদুল্লাহর ভাড়া বাসায় যান বেলাল উদ্দীন। বাসায়ও তাদের মধ্যে উচ্চ বাক্যে বাদানুবাদ হয়। রাত ১২টার দিকে প্রতিবেশিদের আবদুল্লাহর মৃত্যু হওয়ার কথা জানান তার স্ত্রী ইয়াছমিন।
মৃত আবদুল্লাহর স্ত্রী ইয়াছমিন জানান, বেলাল উদ্দীন মঙ্গলবার রাত ৮টার পর তার স্বামীর কাছ থেকে পাওনা টাকা চাইতে তাদের বাসায় আসে। কিছুক্ষন পর চলে যান। এরপর রাত ১২টার দিকে হঠাৎ তার স্বামী মারা যান। মৃত্যুর পর তার গলা লাল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে ইয়াছমিন আকতার জানান, হয়ত মাদক সেবন করার কারনে এমনটা হয়েছে। বেলাল উদ্দীনের সাথে পরকিয়ার সম্পর্ক থাকার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
স্থানিয়রা জানান, একজন সুস্থ মানুষের আকস্মিক মৃত্যু হলে গলায় আঘাতের দাগ, গলা লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া নামাজে জানাজার সময় নির্ধারণ করলেও তড়িগড়ি করে ২ ঘন্টা পুর্বে মৃতদেহ দাফন করাটাও রহস্যজনক।
বেলাল উদ্দীন ও আবদুল্লাহ রশিদের স্ত্রী ইয়াছমিন মিলে হত্যা করতে পারে বলে সন্দেহ করছেন প্রতিবেশিরা। তারা বলছেন, বেলাল উদ্দীন ও ইয়াছমিন মিলে কৌশলে তাকে হত্যা করেছে। এর কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, মৃতের গলায় আঘাতের দাগ, গলা লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ও তড়িগড়ি করে মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় নামাজে জানাজার সময় নির্ধারণ করলেও তড়িগড়ি করে সকাল ৯টায় মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিবেশি দাবি করেছেন, স্থানীয় মেম্বার কবির আহম্মদ প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর এক রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেন। সে সূত্রে স্থানীয় মেম্বার কবির আহম্মদ মৃত আবদুল্লাহর স্ত্রী ইয়াছমিনের আপন খালু। স্থানীয় মেম্বার কবির আহামদসহ মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে বেলাল উদ্দীন। যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তদন্তে করলে এই মৃত্যুর রহস্য উৎঘাটন হবে বলে দাবি করেন ওই প্রতিবেশিরা। প্রকৃত রহস্য বের করতে প্রয়োজনে ওই প্রবাসীর মৃতদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করারও দাবী জানান তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেলাল উদ্দীন বলেন, “টমটমের ব্যাটারি কিনতে স্থানীয় দোকানদার আবুল কালামের সুপারিশে আবদুল্লাহকে আমি টাকা ধার দিয়েছিলাম। মাঝে মধ্যে তাদের বাসায় যাওয়া হত। কিন্তু কোন বিষয় নিয়ে আমার সাথে আবদুল্লাহর কোনো তর্কাতর্কি বা সমস্যা হয়নি। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির আহামদও ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “স্ট্রোক করে আবদুল্লাহ মারা গেছেন। কিন্তু তাকে মেরে ফেলার গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সে রোহিঙ্গা নাগরিক। তার কোন স্বজন এখানে নেই, থাকে সৌদি আরব। এটি তদন্ত করারও কোন প্রয়োজন নেই।”
Posted ৮:৫১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh