শফিক আজাদ,উখিয়া | বুধবার, ০১ মে ২০১৯
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের ত্রাণ বিতরণে নিয়োজিত ওয়ার্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডাব্লিউএফপি)’র বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম,দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও বিতরণকৃত ত্রাণের চাল,ডাল,তেলসহ বিভিন্ন পণ্য মুহুর্তের মধ্যে হাত বদল হয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রামের গুদামে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণের মালামাল ক্রয়কারী সিন্ডিকেটের এক সদস্য। এরই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গাদের জন্য বিতরণকৃত ২২লক্ষাধিক টাকার ত্রাণের এ্যাংকর ডাল জব্ধ করেছে বিজিবি।
সুত্রে জানা গেছে, উখিয়া-টেকনাফ ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। এই ডব্লিউএফপি এর কক্সবাজার অফিসের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে খাদ্য সরবরাহে নিযুক্ত ঠিকাদার অপকর্মে ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য বিতরণকৃত ত্রাণের মালামাল মুহুর্তের মধ্যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আবারো ডাব্লিউএফপি গুদামে চলে যাচ্ছে। ফের ওই পণ্য আবার বিতরণ করে থাকে রোহিঙ্গাদের মাঝে। এভাবে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।
ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, ডব্লিউএফপির খাদ্য সরবরাহ নিয়ে দুর্নীতি এতোটাই সুক্ষ্ম ও পেশাদারী কায়দায় সম্পন্ন হয় যে, আপাতদৃষ্টিতে তা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হবে। ডব্লিউএফপির আওতায় নিযুক্ত এক সরবরাহকারী ঢাকার রাজারবাগের জহুরা কামাল ট্রেডিংয়ের মালিক জনৈক টিপু। মূলতঃ মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএস এইড এর রোহিঙ্গাদের জন্য দেয়া খাদ্য সাহায্য তদারকি এবং বিলিবন্টন করে থাকে ডব্লিউএফপি। খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার জহুরা কামাল ট্রেডিং অবৈধভাবে তার সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে কক্সবাজারের কিছু অসাধু খাদ্য ব্যবসায়ীকে। যারা ক্যাম্প ভিত্তিক ত্রাণের মালামাল ক্রয়কারী সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে যাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণের মালামাল (চাল-ডাল) অল্প দামে সংগ্রহ করে। এসব চাল-ডাল জমা করা হয় কক্সবাজার বিসিক এলাকার একটি গুদামে। আবার সেখানে ইউএস এইড এর ডাব্লিউএফপি ছাপানো বস্তায় এইসব চাল ডাল প্যাকেটজাত করে। এদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য উপকরণ প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়া এবং খাদ্য উপকরণ মানসম্মত কিনা তা পরিদর্শন করার দায়িত্ব ডব্লিউএফপি। কিন্তু তারা তা না করে সিন্ডিকেটের সাথে (এরপর পৃষ্ঠা-২ ঃ কলাম- ৩ )
ব্যাপক দুর্নীতি
আতাত করে কোটি কোটি টাকার আত্মসাৎ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ঠরা।
এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অল্প দামে ক্রয় করে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় একটি মালবাহী কাভার্ড ভ্যান গাড়ী তল্লাশি চালিয়ে ২৫হাজার কেজি এ্যাংকর ডাল (ডাব্লিউএফপি’র বস্তা সংযুক্ত) জব্ধ করেছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা বিজিবি’র সদস্যারা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার-৩৪ বিজিবি’র ভারপ্রাপ্ত উপ-অধিনায়ক মেজর আশরাফ উল্লাহ রনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজারগাড়ী একটি মালবাহী কাভার্ড ভ্যান গাড়ী যার নং-(চট্টমেট্রো-ট-৬৪১১) তল্লাশি করে উক্ত ডাল গুলো জব্ধ করা হয়। জব্ধকৃত ডালের মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। তিনি এসময় আরো বলেন, গত ২৫ এপ্রিল একটি ভাবে একটি কাভার্ড ভ্যান তল্লাশি চালিয়ে ১০লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ২০ হাজার কেজি এ্যাংকর ডাল জব্ধ করা হয়। এসব ত্রাণের পণ্য পরিবহনের দায়ে গাড়ী ২টি আটক করা হয়। এর মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। উক্ত জব্ধকৃত মালামাল গুলো উখিয়ার বালুখালী শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে তিনি জানিয়েছেন।
গোপন সুত্রে জানা গেছে, বিজিবি’র জব্ধকৃত এসব ত্রাণের এ্যাংকর ডাল গুলো কম দামে লিনামের মাধ্যমে বরাদ্দ পেতে কাস্টমস্ অফিসারদের ম্যানেজের চেষ্টা চালাচ্ছে ওই ত্রাণ ক্রয়কারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। যদিওবা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বালুখালী কাস্টম্স ইন্সপেক্টর শামসুল ইসলাম।
Posted ১:০৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ মে ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh