নিজস্ব প্রতিনিধি, উখিয়া | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯
মিয়ানমার সেনা ও বিজিপি’র নির্যাতনের মূখে রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে এদেশে। বর্তমানে প্রায় মুসলিম শূণ্য রাখাইন রাজ্য। পাশাপাশি রাখাইনে নতুন করে ঘটনার জন্ম দিচ্ছে আরকান আর্মি নামের মিয়ানমার সরকার বিদ্রোহীরা। তবুও কিভাবে প্রতিনিয়ত ইয়াবা চালান আসছে তা নিয়ে সীমান্ত বসাবসকারীরা বিশ্লেষণ করতে দেখা গেছে। বুধবার সকালে উখিয়া সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে এসব কথা শোনা গেছে। তবে এ নিয়ে লোকাল প্রশাসনকে দায়ী করেছেন স্থানীয় লোকজন।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর আমরা মনে করেছিলাম ইয়াবা ও মাদকের চালান বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখতেছি আগের তুলনায় ইয়াবা ও মাদকের চালান আসছে সীমান্ত দিয়ে। যাহা গত কয়েকদিনে প্রশাসনের হাতে আটক ইয়াবা’র চালান থেকে বুঝা যায়। তাদের অভিযোগ, সীমান্তের এক শ্রেণীর ইয়াবা ও মাদক পাচারকারী চক্র কৌশলে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে এসব ইয়াবা ও মাদক নিয়ে আসছে এদেশে।
কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত এক রোহিঙ্গা জানান, তার বাড়ী মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ায়। মূলতঃ মিয়ানমারের দুর-দুরান্ত থেকে যে সমস্ত ইয়াবা ও মাদকের চালান সীমান্ত অতিক্রম করতো তার মধ্যে ঢেকিবনিয়া অন্যতম। ঢেকিবনিয়ার রোহিঙ্গা ইয়াবা গডফাদাররা বর্তমানের আশ্রয় নিয়েছে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে। বালুখালী ক্যাম্প থেকে ঢেকিবনিয়া সীমান্তের দুরত্ব মাত্র ৩/৪ কিলোমিটার। তাছাড়া তুমব্রু রাইট সীমান্ত মাত্র আধা কিলোমিটার। এসব গডফাদারেরা মিয়ানমারের বিভিন্ন বাহিনীকে ব্যবহার করে ইয়াবা গুলো সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসে কাটাতারের পাশাপাশি। পরে ইয়াবা চালান সীমান্ত দিয়ে রাতের আধারে এদেশে নিয়ে এসে মজুদ করে থাকে সীমান্তবর্তী স্থানীয় ইয়াবা পাচারকারীদের বাড়ী ঘরে অথবা বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখান থেকে সুযোগ বুঝে কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানের ইয়াবার চালান পাচার করে থাকে এই সিন্ডিকেট।
অপরদিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী রহমতের বিল, আঞ্জুমানপাড়া দিয়েও আসছে ইয়াবা। সম্প্রতি সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি’র সদস্যরা ইয়াবা চালান আসার খবর পেয়ে রহমতের বিল সীমান্তের নাফনদী থেকে দেড় লাখ পিস ইয়াবার বিশাল চালান উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও পাচারকারীরা নাফনদী হয়ে নৌকায় করে মিয়ানমারের অভ্যান্তরে পালিয়ে যায়।
গত মঙ্গলবার পালংখালী বিজিবি’র সদস্যরা কক্সবাজারগামী একটি সিএনজি তল্লাশী চালিয়ে ১০হাজার পিস ইয়াবা সহ দুই পাচারকারীকে আটক করেছে। আটককৃত পাচারকারীরা হলেন-টেকনাফের হোয়াইকং খারিক্ষাঘোনার রশিদ মোহাম্মদের ছেলে মোঃ মোস্তাফিজ (২০) ও তুলাতলীর মোঃ হোসেন শরীফের ছেলে মোঃ জাফর ইসলাম (২৫)। এছাড়াও গত কয়েকদিনে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা বিজিবি ও রেজুখাল বিজিবি, র্যাব-১৫, পুলিশের সদস্যরা বেশ কয়েকটি ইয়াবা চালান আটক করেছে। যার ফলে উখিয়ার সচেতন মহলের অভিযোগ এখন ইয়াবা আসছে কিভাবে।
সর্বশেষ সোমবার ভোর রাতে বালুখালী সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান নিয়ে আসার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা পাচারকারীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন বালুখালী এলাকার মোঃ ছিদ্দিকের ছেলে নাজমূল নামের এক যুবক।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া থানার অফিসার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, সীমান্তে ইয়াবা পাচার বন্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আর উখিয়ার চিহ্নিত ইয়াবা গডফাদার গুলোর ব্যাপারে নজরদারী করা হচ্ছে। পুলিশি অভিযানে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে তিনি জানিয়েছেন।
Posted ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh