জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ | বুধবার, ২৩ জুন ২০২১
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার দুই শতাধিক জেলে পরিবার নাফনদীর ভাঙন ঝুঁকিতে মানবেতর দিনযাপন করছে। যেকোন মুহুর্তে নদী ভাঙনে তাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ আশঙ্কায় চরম দুঃস্বপ্ন চোখে নিয়ে দিন কাটছে অসহায় জেলে পরিবারগুলোর। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাফনদীর সংলগ্ন বাঁধের পাড়ে জেলে পল্লীর প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি রয়েছে। সেখানে নাফ নদীর জোয়ারের আঘাতে প্রায় দুই শতাধিক ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী পদক্ষেপ না নিলে বর্ষার শুরুতে এসব ঘর বিলীন হয়ে যাবে। নিজেদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু নদীর ভাঙনে থলিয়ে গেলে বসবাসের ঠাঁই কোথায় হবে এমন দুঃশ্চিন্তায় অনেক অসহায় গৃহকত্রীর বিলাপ কান্নার দৃশ্য তাদের এখন নিত্যচিত্র। নদী ভাঙনের কবলে পড়া শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মোহাম¥দ কাসেম বলেন, আমি একজন অসহায় দরিদ্র জেলে। বাপদাদার আমল থেকে নাফদীর পাড়ে ঘর করে আমাদের বসবাস। এছাড়া আমাদের কোন সহায় সম্বল নেই। চার বছরেরবেশি সময় ধরে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় এমনিতেই অভাব অনটনের গ-ি থেকে বেরোতে পারছিনা। এমন দুঃসহ অবস্থায় বসবাসের একমাত্র ঘরটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেলে আমরা যাবো কোথায় ? একই এলাকার বাসিন্দা জুহুরা খাতুন বলেন, আমি স্বামী হারা অভাগিনী। আয় রোজগারের মতো কেউ নেই। চোখের সামনে নদীর জোয়ার রান্না ঘরের কিনারায় পৌঁছেছে। এখনো আমাদের কেউ রক্ষা করতে এগিয়ে আসছেনা। যদি ঘর হারায় তাহলে আমাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে দেবে কে ? অন্তত এক বর্ষা তো থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দুস সালাম বলেন, জালিয়া পাড়ায় নাফনদী সংলগ্ন প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত বসতি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এরমধ্যে এক কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গা চলতি বর্ষায় বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙনে শুধু জেলে পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে এমনটা নয়, পাশাপাশি নতুন করে নির্মান কাজ শেষ হওয়া সীমান্ত সড়কের বাঁধেও ব্যাপক ক্ষতি সাধন হতে পারে। তাই জেলে পরিবারের মানুষের কষ্ট এবং বাঁধের ঝুঁকি মোকাবেলায় নাফ নদী সংলগ্ন জরুরী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। জালিয়া পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কিছুদিন আগে জালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি ভবনও নাফনদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় স্কুল ভবন দুটি বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়েছে। একই ভাবে জেলে পল্লীর অসহায় জেলে পরিবারের মানুষের কথা বিবেচনা করে ভাঙন আশঙ্কাগ্রস্থ এলাকায় পাউবো জরুরী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করলে উপকৃত হবে এসব পরিবারের সহ¯্রাধিক মানুষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজারের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, জালিয়া পাড়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে জরুরী কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা দেখছি আমরা।
Posted ১:২৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৩ জুন ২০২১
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh