মুকুল কান্তি দাশ | বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
চকরিয়া আশরাফ জামান রনি। বয়স চৌদ্দ। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের খোঁজাখালীর এক পরিবারের জন্ম তার। কিন্তু তার জন্মরে আগে হারান পিতাকে , জন্মের পর হারান মাকে। দুইজনই তাকে পেলে দুইজন দুই মেরুতে চলে যান। শেষে নানির বাড়ির আশ্রয়ে বড় হয় রনি। মা তার মাতৃত্ব স্বীকার করলেও ,অস্বীকার করেন পিতা আশহাদুল করিম রুবেল তার পিতৃত্ব পরিচয় অস্বীকার করেন। জন্মের চৌদ্দ বছরে এসে পিতৃ পরিচয়ের জন্য দৌঁড়াতে হয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। দুর্বিসহ এক জীবন পার করছিলো আশরাফ জামান রনি। অবশেষে পুলিশের সহায়তায় মিলেছে পিতৃ পরিচয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রনি যখন তার মায়ের গর্ভে, সে অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সৌদি আরবে চলে যান বাবা আশহাদুল করিম রুবেল। বেশ কয়েকবছর পর বিদেশ থেকে ফিরলে সন্তানের পিতৃ পিরচয় অস্বীকার করেন আশহাদুল করিম রুবেল। এনিয়ে অনেক সালিশ-বৈঠকও হয়। কোন সুরাহ হয়নি। এদিকে মা তার সন্তানকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নানা বাড়িতে দিয়ে সেও আরেকটি বিয়ে করে চলে যায়। সেখানেই নানানানির আন্তরিকতায় এবং দিক নির্দেশনায় বড় হতে থাকে আশরাফ জামান রনি। সেখানে ভর্তি করানো হয় স্কুলে। সম্প্রতি স্কুলে শিক্ষার্থীদের তথ্যভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরী ও ইউনিক আইডি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য তার পিতৃপরিচয়ের প্রয়োজন হয়। পিতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি প্রয়োজন হয় তার। তাই, সে তার বাবার বাড়িতে যায়। সেখানে তার বাবার দিকের আত্মীয় স্বজন তার সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এই নিয়ে আশরাফ জামান রনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ফুটেজ ছাড়ে। এটি দেখে এগিয়ে আসেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। তিনি বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত ‘বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ’ এর ইনবক্সে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। এই বার্তাটি গ্রহনের পর মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়েরকে বার্তাটি প্রেরণ করে এই বিষয়টি তদন্ত করে উল্লিখিত কিশোরের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করতে ও কিশোরের অভিভাবকত্বের দায়দায়িত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয়। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো.হাসানুজ্জামান স্যার ঘটনাটি সর্ম্পকে আমাকে অবহিত করেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য থানার এসআই গোলাম সারোয়ারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সহিত বিষয়টি তদন্ত করেন। এসআই গোলাম সারোয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে আশরাফ জামান রনি পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত হন। তিনি আরো বলেন, পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর আশরাফ জামান ররি বাবা সৌদি প্রবাসী আশহাদুল করিম রুবেলর সাথে যোগাযোগ করা হয়। তার সাথে আলাপ আলোচনার পর তিনি পিতৃ পরিচয় দিতে সম্মত হন। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজের গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তার পিতৃ পরিচয়ের জন্য জাতীয় পচিয় পত্র তৈরী করে তার হাতে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিতৃ পরিচয়হীন কিশোন আফরাফ জামান রনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এতোদিন পিতা-মাতা ছাড়া দুর্বিসহ জীবন কেটেছে। তার উপর পিতৃ পরিচয় না থাকা, এক নিদারুণ কষ্টে ছিলাম। বন্ধুরা সবাই জানতো আমার পিতা-মাতা রয়েছে। এতোদিন বিষয়টা চাপিয়ে রাখতে পারলেও সম্প্রতি স্কুলে তথ্যভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরী ও ইউনিক আইডি কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, এটার জন্য বেশ কয়েকবার চকরিয়ার পিত্রালয়ে গেলেও ওরা সবাই আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দিতো। এমনকি ওরা আমাকে মেরে ফেলতেও চেয়েছিলো। এসব বিষয় তুলে ধরে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও আপলোড করি। ঘটনাটি জেনে এগিয়ে আসেন পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামীলীগ নেত্রী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী ম্যাডাম। এখন আমি পিতৃ পরিচয় পেয়েছি । আমার আর কোন কিছু লাগবেনা। আমি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আন্তরিত কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
Posted ১:৫৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন ২০২১
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh