| মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আবদুল আজিজ
মিয়ানমারে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের নেত্রী অং সান সু চি ও দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এঘটনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কিছু রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মিয়ানমারে একের পর এক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফের অন্ধকারে ধাবিত হচ্ছে।
কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালী ১৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী একের পর ইস্যু তৈরী করছে। নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পর তারা নানাভাবে অভ্যন্তরিণ সমস্যা তৈরী করছে। সর্বশেষ অং সান সুচি ও প্রেসিডেন্ট সহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে মুলত: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফের অন্ধকারে চলে গেছে। এতে করে আমরা খুব হতাশ।’
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ধুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও অং সান সুচি একই সূতায় গাঁথা। এতে আমাদের খুশি ও দু:খ পাওয়ার কিছু নেই। তবে সবচেয়ে খারাপ লাগছে যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা সামনে আসে, তখন মিয়ানমার সরকার কোন না কোন ইস্যু তৈরী করছে।’
উখিয়ার বালুখালী ২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মিনারা বেগম বলেন, ‘অং সান সুচি গ্রেপ্তার হওয়াতে আমি খুশি। কারণ, তার প্রত্যক্ষ মদদে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। যার কারণে আমরা ভিন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।’
মিয়ানমারে সৃষ্ট ঘটনায় নতুন করে রোহিঙ্গা আসার সম্ভাবনা নেই জানিয়েছে টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের জুবাইদা বেগম বলেন, ‘সকালে মিয়ানমারে অবস্থানরত আমার এক স্বজনের সাথে আমার কথা হয়েছে। সে আমাকে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে কিছু সেনাবাহিনীর গাড়ী টহল দিতে দেখা গেছে। তারা নিরাপদে ও ভাল রয়েছে।’
উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা আয়ুব আলী মাঝি বলেন, ‘টেলিভিশনে মিয়ানমার পরিস্থিতি দেখেছি। এতে বুঝা যায় অং সান সুচি তার বেঈমানির শাস্তি ভোগ করছে। সে দীর্ঘদিন রোহিঙ্গার পক্ষে কথা বলে আসলেও ক্ষমতার মোহে আমাদের আগুনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্ব দরবারে আমাদের বিপক্ষে কথা বলেছেন। আজ এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলেও আমি খুশি।’
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ৭নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘মিয়ানমারের ঘটনায় আমরা উদ্ধিগ্ন। আমরা এতদিন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোর মুখ দেখলেও তা এখন অনিশ্চিত। কারণ, মিয়ানমার সেনা বাহিনী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোন কথা এমনিতে শুনতে চান না। তার উপর এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে নানাভাবে রোহিঙ্গাদের উপর সমস্যা সৃষ্টি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।’
একই কথা বলেছেন, তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা আবু সৈয়দ, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আমান উল্লাহ, ফয়েজ উল্লাহ মাঝি, হামিদ মাঝি, উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌলভী জাফর আলম, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাষ্টার আবদুল মান্নান, কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবু তাহের সহ অনেক রোহিঙ্গা মাঝি ও কমিউনিটি নেতা।
এদিকে, মিয়ানমারের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কোন ধরণের প্রভাব পড়েনি বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতিতে মন্তব্য করার মতো কোন প্রতিক্রিয়া এখনো সৃষ্টি হয়নি। তবে সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা আগে থেকে সতর্ক ছিল এখনো রয়েছে।
Posted ২:১৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ajkerdeshbidesh.com | ajker deshbidesh